১৫ মাসের ছেলে শিশু রাহাত ( ছদ্মনাম)। বয়স অনুযায়ী বৃদ্ধি ও বিকাশ ঠিকঠাক

Dr. Shaoli Sarker

Dr. Shaoli Sarker

FCPS ( Paediatrics)- Bangladesh Shishu Hospital & Institute, Neurogen Health Care

১৫ মাসের ছেলে শিশু রাহাত ( ছদ্মনাম)। বয়স অনুযায়ী বৃদ্ধি ও বিকাশ ঠিকঠাক।  রাহাত এর ‘খিঁচুনির’ জন্য তার অভিভাবকেরা প্রচন্ড চিন্তিত। বিগত ২ মাস যাবত তার ‘খিঁচুনি’ হচ্ছে। স্থানীয় চিকিৎসক এর কাছে নিয়ে গেলে তাকে খিচুনির জন্য ঔষধ দেওয়া হয়। কিন্তু তার ‘খিঁচুনি’ কমে না । পর্যায়ক্রমে চিকিৎসক ঔষধ বাড়াতে থাকেন কিন্তু রাহাত দিন দিন নেতিয়ে পড়ে, ঝিমায়,শরীর কাঁপে। তার হাঁটার ব্যলেন্সে সমস্যা হতে থাকে । এই অবস্থায় মা ও দাদী তাকে দেখাতে নিয়ে আসেন।

সমস্ত ইতিহাস পর্যালোচনা করে আর বাচ্চার শারীরিক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেল এই সমস্যাটি আদৌ খিঁচুনি নয়। একে বলা হয় ব্রেথ হোল্ডিং স্পেল। ( Breath Holding Spell ). এতে খিঁচুনির ঔষধ এর কোন ভুমিকা নেই কিন্তু অতি উচ্চ মাত্রায় এই ঔষধ পাওয়ার কারণে বাচ্চার পরবর্তী সমস্যাগুলো দেখা দেয়।

ব্রেথ হোল্ডিং স্পেল কি ?

  • বাচ্চা জেদ করলে/ রাগ করলে/ আঘাত পেলে কান্না শুরু করে। কান্নার সময় দম নিয়ে আর ছাড়ে না ।ঐ সময় বাচ্চা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ঠোঁট নীলচে হয়ে যায় আর অজ্ঞান হয়ে যায়। এছাড়া বাচ্চার শরীর বাঁকা হয়ে যেতে পারে আর চোখ ও উল্টাতে পারে যেটা ১ মিনিটের কম সময় স্থায়ী হয়।

খিঁচুনির সাথে পার্থক্য কি ?

  • এটা ঘুমের মধ্যে হয় না
  • জিদ করা/আঘাত পেয়ে কান্না করার সাথে সরাসরি জড়িত থাকে
  • ১ মিনিটের কম সময় স্থায়ী হয়। দ্রুত বাচ্চা সুস্থ হয়ে যায়।

কেন হয় ?

  • এটা একটি রিফ্লেক্স সমস্যা যেটার কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অজানা তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কারণ জড়িত থাকে পারে-

o পারিবারিক ইতিহাস

o আয়রনের ঘাটতি জনিত রক্তশুন্যতা

o জেনেটিক কারণ

কতবার হতে পারে , কতদিন থাকতে পারে ?

  • মাসে ১-২ বার থেকে শুরু করে প্রতিদিন ১-২ বার পর্যন্ত হতে পারে। সাধারনত ৬ মাস বয়সের পর থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত থাকতে পারে। এরপর আর হয় না ।

অভিভাবক হিসাবে করণীয় ?

  • একজন অভিজ্ঞ শিশু নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহন করুন। এটা যেহেতু খিচুনি নয় তাই খিচুনির ঔষধের কোন ভুমিকা নেই। বাচ্চার একই সাথে অন্য কোন নিউরোলজিক্যাল সমস্যা বা আচরণজনিত সমস্যা আছে কিনা তা নির্নয় করতে হবে ।
  • বাচ্চার রক্তশুন্যতার সমস্যা থাকলে তা নির্নয় করে চিকিৎসা করতে হবে।
  • বাচ্চার জেদ / আচরণ জনিত সমস্যার সমাধান।
  • স্পেল চলাকালীন সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে বাচ্চা যেন পড়ে গিয়ে বা কোন ভাবে আঘাত না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ।
  • অজ্ঞান হয়ে গেলে বাচ্চাকে এক পাশে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। মাথায় ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুছিয়ে দেওয়া যায়।
  • স্পেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাকে আদর করে দিন কিন্তু অতিরিক্ত মনোযোগ দিবেন না , প্রশ্রয় দিবেন না বা যে কারণে জিদ করেছিল সেটা দিয়ে দিবেন না । তাহলে পরবর্তীতে সমস্যা বাড়বে।
  • ব্রেথ হোল্ডিং হয় বলে বাচ্চা যা চায় তাই দিয়ে দিবেন না । এতে মস্তিষ্কের কোন ক্ষতি হয় না । কাজেই বাচ্চার ডিসিপ্লিন অন্য দশটা বাচ্চার মতই বজায় রাখুন।
  • যদি এক মিনিটের বেশি দম বন্ধ থাকে বা অজ্ঞান থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

পুনশ্চঃ রাহাত সাহেবের বয়স এখন দেড় বছর। তিনি এখন সম্পূর্ন সুস্থ। তার আয়রন আর জিংক সাপ্লিমেন্ট ব্যতিত কোন ঔষধের প্রয়োজন পড়েনি। তার অভিভাবকেরা নিশ্চিন্ত। আর তার মিষ্টি হাসিটি স্রষ্টার কাছ থেকে চিকিৎসকের জন্য উপহার।